
কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী ময়নামতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষকের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করেছে প্রতিষ্ঠানটির এডহক কমিটি।
কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দায়িত্বভাতা হিসেবে বিধি বহির্ভূতভাবে গ্রহণ করা অর্থ প্রতিষ্ঠানকে ফেরত দেবেন অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূঞা।
কমিটির সিদ্ধান্তে আরও উল্লেখ করা হয়, অধ্যক্ষকে বরখাস্তের আগে কোনো শোকজ নোটিশ প্রদান করা হয়নি, যা ‘প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিস’ লঙ্ঘন করেছে। এতে তাঁর বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রমে পদ্ধতিগত ত্রুটি সুস্পষ্ট। তবে তিনি যে দায়িত্বভাতা গ্রহণ করেছেন, তা আইন ও বিধি বহির্ভূত হওয়ায় বাতিল করা হয়েছে এবং তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। তার বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে পুনরায় স্বপদে বহাল করা হয়েছে।
১ জুলাই তারিখে প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূঞা অতিরিক্ত দায়িত্বভাতা গ্রহণ করেছেন। প্রতিবেদনে কিছু মতামত যুক্ত করে তা এডহক কমিটির সভাপতি বরাবর উপস্থাপন করা হয়। এর আগে কোনো শোকজ ছাড়াই অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে কমিটির সভাপতি, রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর চিফ রিপোর্টার ও ল’ ডেস্ক ইনচার্জ দিদারুল আলমের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হয়। আলোচনার পর বিদ্যমান বিধিবিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির স্বার্থ ও মর্যাদা বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয় এডহক কমিটি।
এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিবুর রহমানের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তার বিরুদ্ধে কোনো অডিট আপত্তি পায়নি। তবে কিছু সুপারিশ প্রদান করেছে। সুপারিশগুলো হলো, ভবিষ্যতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রদান,শিক্ষকদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটানোর উদ্যোগ গ্রহণ, শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করা।
কমিটির নথিপত্রে দেখা যায়, অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূঞার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধিমালা-২০২৪’-এর আওতায় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়নি। এছাড়া সভা আহ্বান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট প্রবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থায় আইনি ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি স্পষ্ট।
তবে তদন্তের মাধ্যমে কিছু অভিযোগ এডহক কমিটির দৃষ্টিগোচর হওয়ায় ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে জানানো হয়। এডহক কমিটি মনে করে, আইনি ও বিধিবহির্ভূত কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানটির জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিষ্ঠানটির বৃহত্তর স্বার্থ ও চলমান অচলাবস্থা নিরসনে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এডহক কমিটি।
ময়নামতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের আগামীর কার্যক্রম আরও যুগোপযোগী করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি দিদারুল আলম। তিনি বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কাম্য। সবার সহযোগিতায় একে অসাধারণ মেধা বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।”
উল্লেখ্য, ২৪ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা কর্তৃক দিদারুল আলমকে সভাপতি করে গঠিত হয় বর্তমান এডহক কমিটি। অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত ছিল পূর্ববর্তী কমিটির।
ছবিঃ সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের পর দায়িত্ব গ্রহন করছেন ময়নামতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান ভূঞা।