
কুমিল্লা–৬ (সদর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন দাবি ঘিরে টানা চার দিন ধরে নজিরবিহীন কর্মসূচি পালন করছেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিনের অনুসারীরা। ধাপে ধাপে সড়ক অবরোধ, মর্শাল মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, নারীদের সমাবেশ, রোজা–ইফতার ও বিশেষ দোয়া মাহফিল।
গতকাল বুধবার বিকেলে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে কয়েক হাজার নারী সমবেত হন। সেখানে আয়োজিত সমাবেশ থেকে কুমিল্লা–৬ (সদর) আসনে হাজী আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিনকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে “বিশেষ নফল রোজা পালনের” ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই ঘোষণার অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দিনভর রোজা রেখে কান্দিরপাড়ে গণ–ইফতারের আয়োজন করে তার অনুসারীরা।
গণ–ইফতার শেষে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে নেতাকর্মীরা জানান, এলাকার উন্নয়ন, শান্তি, সাংগঠনিক ঐক্য ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিনকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান কুমিল্লার সাধারণ মানুষ। এজন্য তারা আল্লাহর দরবারে দোয়া, ইবাদত ও কর্মসূচির মাধ্যমে বিশেষ প্রার্থনা করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন।
গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। সেখানে কুমিল্লা–৬ আসনে চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকেই কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিনের অনুসারীরা এই ঘোষণাকে ‘তৃণমূলের প্রত্যাশার প্রতিকূল’ দাবি করে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান এবং ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু করেন।
আমিন–উর–রশিদের অনুসারীদের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত বিবেচনা না করেই মনোনয়নের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, “দুই দশক ধরে কুমিল্লা-৬ আসনের রাজনীতিতে নেতৃত্ব, আন্দোলন, সাংগঠনিক কাজ ও সাংগঠনিক ত্যাগের স্বীকৃতিই হওয়া উচিত—যা আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিন অর্জন করেছেন।”
কুমিল্লা–৬ আসনটি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, আদর্শ সদর উপজেলা, সদর দক্ষিণ উপজেলা ও সেনানিবাসের একটি অংশ নিয়ে গঠিত। ২০১৮ সালে আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিন কুমিল্লা–৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। অপরদিকে মনিরুল হক চৌধুরী একই নির্বাচনে কুমিল্লা–১০ আসনে দলীয় মনোনয়ন পান। পরে সীমানা পুনর্নির্ধারণে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কুমিল্লা–১০ থেকে বাদ পড়ে কুমিল্লা–৬ আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর পর থেকে নতুন সীমানার কুমিল্লা–৬ আসনে মনিরুল হক চৌধুরী। আর অন্যদিকে কুমিল্লা-৬ পুরোনো সীমানার রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের দাবি তুলে ধরছেন ইয়াছিনপন্থীরা।
মনছুর নিজামী নামে এক যুবদল নেতা বলেন,“আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি। আমাদের লক্ষ্য বিরোধিতা নয়—ন্যায়সঙ্গত দাবির স্বীকৃতি। আমিন–উর–রশিদ ইয়াছিন শুধু একজন নেতা নন, কুমিল্লা-৬ আসনের মানুষের আস্থা–ভরসার নাম। তাই তাকেই চাই।”
ডলি আক্তার নামে এক নারী নেত্রী বলেন,“নারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা, স্থানীয় সমস্যায় পাশে থাকা, শিক্ষা ও মানবিক সহায়তায় ভূমিকা থাকায় নারীদের আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে ইয়াছিন ভাইয়ের প্রতি। এজন্য আজ আমরা রোজা–ইফতার করেছি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে।”
গণ–ইফতার ও দোয়া মাহফিল শেষে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, পুরোনো ত্যাগী নেতৃত্বকে উপেক্ষা করে মনোনয়ন দিলে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে।
গণ–ইফতার ও দোয়া মাহফিলে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলীয় নেতাকর্মীদের জন্যও দোয়া করা হয়, যাতে তারা ন্যায় ও গণতন্ত্রের পথে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
ছবিঃ নফল রোজা পালন শেষে কুমিল্লা নগরীর টাউন হল মাঠে গণ-ইফতার করে ইয়াছিন অনুসারিরা।




