
দীর্ঘ ৩১ বছরের সংগঠন-যাত্রায় মানবিক সেবার যে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন, তারই স্বীকৃতি হিসেবে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেলেন এপে. ডা. মুজিবুর রহমান। এপেক্স বাংলাদেশের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার হাতে এই বিশেষ সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। তবে এই সম্মাননা তাঁর জন্য শুধু ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং একটি দায়িত্ব, আরও কাজ করার প্রেরণা।
১৯৯৩ সাল। কুমিল্লার তরুণ চিকিৎসক ডা. মুজিবুর রহমান তখনই উপলব্ধি করেছিলেন শুধু চিকিৎসার চেম্বার নয়, সমাজের জন্যও কিছু করার বড় প্লাটফর্ম দরকার। সে সময় এপেক্স ক্লাবের সাথে যুক্ত হয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। কুমিল্লা শহরের ছোট ছোট সামাজিক প্রকল্প, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কাজে ছিলেন সবার আগে।
সময় গড়িয়েছে, সংগঠনের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্বে উঠে এসেছেন তিনি। ছিলেন এপেক্স ক্লাব অব কুমিল্লার সভাপতি, পরবর্তীতে জেলা-৩ এর গভর্নর, এবং জাতীয় যুব নাগরিকত্ব পরিচালক (National Youth Citizenship Director) এর দায়িত্বও পালন করেছেন। কর্মদক্ষতা আর নেতৃত্বের গুণে ২০১৮ সালে তিনি লাইফ গভর্নর হিসেবে মনোনীত হন, যা সংগঠনের সর্বোচ্চ সম্মানজনক সদস্যপদ।
বর্তমানে ডা. মুজিবুর রহমান এপেক্স বাংলাদেশের এপেক্স এডুকেশন ফান্ড কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তায় তার উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
ডা. মুজিবুর রহমানের কাছে সেবা মানে শুধুই দায়িত্ব নয়, বরং আত্মিক তৃপ্তি। তিনি বলেন, “সংগঠনের কোন পদ-পদবি আসলে সেবা করার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। আমি যখন যেটুকু পেরেছি করেছি। আজীবন সম্মাননা পেয়ে মনে হচ্ছে আরও বড় দায়িত্ব এলো।”
চিকিৎসক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখার ফাঁকে ফাঁকে সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থেকেছেন সবসময়। পরিবারের পূর্ণ সমর্থন ছিল বলেই তিনি এতদূর এগোতে পেরেছেন বলে জানান ডা. মুজিবুর রহমান। তার মতে, “পরিবার যদি পাশে না দাঁড়াতো, এত বছর ধরে এপেক্সের কাজ করে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।”
কুমিল্লার এপেক্স সংগঠনের সদস্যরা মনে করেন, ডা. মুজিবুর রহমান শুধু সংগঠনের নেতা নন, তিনি সবার ‘গার্ডিয়ান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সৎ, নির্লোভ নেতৃত্বে এপেক্স কুমিল্লা চ্যাপ্টার নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে জানান বর্তমান জেলা গভর্নররা।
পুরস্কার পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সম্মাননা কুমিল্লাবাসীর, সংগঠনের সব সদস্যের। সামনে আরও বেশি করে সামাজিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পে যুক্ত হতে চাই। শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক কার্যক্রমই আমার অগ্রাধিকার।”