“ছোট শুরু থেকে বড় স্বপ্ন”—এই বাস্তবতার অনুপ্রেরণামূলক উদাহরণ হয়ে উঠেছেন কুমিল্লার নারী উদ্যোক্তা মোসাঃ লাভলী আক্তার। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কোর্স থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি—তার এই পথচলা আজ দেশের নারীদের উদ্যোক্তা–জাগরণের রোল মডেল।
‘তারুণ্যের উৎসব–২০২৫’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত যুব সমাবেশ ও আলোচনা সভায় তার সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। মুহূর্তটি উপস্থিত তরুণ–তরুণীদের মধ্যে সৃষ্টি করে উচ্ছ্বাস, প্রেরণা ও নিজেদের পরিবর্তন–যাত্রা শুরুর অঙ্গীকার।
অনুষ্ঠানে “সফল আত্মকর্মী” ক্যাটাগরিতে জাতীয় যুব পুরস্কার ২০২৫ প্রাপ্ত উদ্যোক্তা লাভলী আক্তারকে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আমিরুল কায়সার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোঃ নাজির আহম্মেদ খান।
২০১৬ সালে কুমিল্লা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজিত কম্পিউটার বেসিক, ফ্যাশন ডিজাইন ও পোশাক তৈরির প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নেন লাভলী আক্তার। শূন্য থেকে শেখা শুরু—ডিজাইন, কাটিং, সেলাই, ফিনিশিং… সবই নতুন ছিল তার জন্য।
কিন্তু শুরুতেই লক্ষ্য ছিল পরিষ্কার—নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে নিজের উদ্যোগে। বাড়ির এক কোণে একটি সেলাই মেশিন দিয়ে শুরু হয় তার উদ্যোক্তা–যাত্রা। সেই ছোট উদ্যোগই পরবর্তীতে “নকশিপট” নামে একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়।
গুণগতমান, সৃজনশীল ডিজাইন এবং ক্রেতাবান্ধব সেবার কারণে “নকশিপট” কুমিল্লায় পরিচিত একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারী আজ আত্মকর্মসংস্থানে যুক্ত এবং নিজ পরিবারের অর্থনৈতিক সহায়ক হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠিত।
শুধু ব্যবসা নয়—সমাজ পরিবর্তনেও কাজ করছেন লাভলী আক্তার। নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি এবং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “নকশিপট যুব মহিলা সংস্থা”। তার উদ্যোগে ইতোমধ্যে বহু নারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে আয়–রোজগারের পথ তৈরি করেছেন।
লাভলী আক্তার বলেন,“কোনো কাজই ছোট নয়। সততা, একাগ্রতা এবং কঠোর পরিশ্রম—এই তিনটিই সাফল্যের আসল চাবিকাঠি। যে স্বপ্ন আমরা দেখি, সেটিকে বাস্তবায়নের সাহস থাকতে হবে।”
তার এই বার্তা অনুষ্ঠানে উপস্থিত তরুণ–তরুণীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করে।
উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে একাধিক স্বীকৃতি অর্জনের পর ২০২৫ সালে জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্তি তার সাফল্যের পথচলাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। প্রশিক্ষণার্থী থেকে আজ তিনি প্রশিক্ষক, কর্মসংস্থান স্রষ্টা এবং নারী উদ্যোক্তা–প্রেরণার প্রতীক।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন—লাভলী আক্তার প্রমাণ করেছেন, একটি উদ্যোগ শুধু একজন ব্যক্তির জীবন নয়, গোটা সমাজের পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হতে পারে। তার সাফল্য সকল নারীর সম্ভাবনা, সক্ষমতা ও দৃঢ়তার প্রতীক।
তরুণদের উদ্দেশে জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়সার বলেন—রাষ্ট্রের উন্নয়নে তরুণ ও যুব সমাজই সবচেয়ে বড় শক্তি। একাগ্রতা, দক্ষতা ও সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে তরুণরা নিজেদের বদলে দিতে পারে, বদলে দিতে পারে সমাজ ও দেশ।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মোঃ ইসহাক। সঞ্চালনা করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মোঃ রাশেদুল আলম।
এসময় জেলা ক্রীড়া অফিসার বখতিয়ার আলম গাজী, কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম সরকার, সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ, পেইজ ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোঃ ইউনুস, যুব উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রশিক্ষক শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় থেকে আগত উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষক, সংগঠক, সরকারি–বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অনুষ্ঠানে অংশ নেন।