কুমিল্লায় ভূল চিকিৎসায় ৭ম শ্রেনীর পড়ুয়া মিম আক্তার নামে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রবিবার রাত ৮ টায় নগরীর হেলথ এন্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে। পরিবারের দাবি অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার কারণে হার্ট ব্লক হয়ে মারা গেছে মীম। এ ঘটনায় সোমবার (২৪ জুন) সকালে হাসপাতালটি বন্ধ করে তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
নিহত মীম আক্তার (১৫) ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অলুয়া কৃষ্ণপুর এলাকার মো: বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। মীম কংসনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, কুরবানির ঈদের এক সপ্তাহ আগে গলায় টনসিলের ব্যাথা নিয়ে মীম তার মায়ের সাথে কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক মোঃ জহিরুল হকের কাছে আসে। পরে চিকিৎসক জহিরুল হকের পরামর্শে গলার কিছু পরিক্ষা করার পর ডাঃ জহিরুল অপারেশনের পরামর্শ দেয়।
সে অনুযায়ী রবিবার (২৩ই জুন) বিকেলে মীম তার মা লিপি আক্তারের সাথে টনসিল অপারেশনের জন্য কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ সার্জন চিকিৎসক মো: জহিরুল হকের কাছে আসেন। ১৪ হাজার টাকা চুক্তিতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চিকিৎসক জহিরুল অপারেশনের জন্য মীমকে একই এলাকার ফেইথ মেডিকেল সার্ভিসেস এন্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারে অপর পাশে অবস্থিত হেলথ্ এন্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পরপরই মীমের শারিরীক অবস্থা খারাপের দিকে চলে যায়। ১০ মিনিট পর চিকিৎসক জহিরুল বের হয়ে স্বজনদের বলে মীম হার্ট অ্যাটাক করেছে। তাকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে নিতে হবে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায় মীম।
মীমের মা লিপি আক্তার বলেন, আমার মেয়ে সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। গলায় ছোট একটা টনসিল হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে ঢুকিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যে জহির ডাক্তার বের হয়ে বলে আমার মেয়ে হার্ট অ্যাটাক করেছে। তারপর তারাই আমার মেয়েকে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এর আগে পথে আমার মেয়ে মারা গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
মীমের বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর জহির ডাক্তার আমারে অপারেশনের টাকা ফেরত দিতে চায়। আমাকে বলছে আমরা যত টাকা চাই ওনি আমাদের টাকা দিবো। টাকা দিয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চাচ্ছে। আমরা রাজি না হওয়ায় জহির ডাক্তার আমার মেয়ের পরিক্ষার রিপোর্টসহ যাবতীয় কাগজ নিয়ে হাসপাতাল তালা মেরে পালিয়ে গেছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
এবিষয়ে ডা. জহিরুল হকের সাথে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার নাছিমা আক্তার বলেন, নগরীর ঝাউতলা এলাকার হেলথ্ এন্ড ডক্টরস জেনারেল হাসপাতালে ভূল চিকিৎসায় এক কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। এ বিষয়টি জন্য তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং হাসপাতালটি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবত্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছবিঃ নিহত কিশোরী মীম আক্তার ও হাসপাতালের সামনে স্বজনের ভীড়।