কুমিল্লায় ভয়াবহ বন্যায় শুরুর পর থেকে ডায়রিয়া, ইনফেকশন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চর্ম রোগে, সাথে রয়েছে ডাইরিয়া, সাপে কাটাসহ অন্যান্য রোগ। তবে পানি কমার সাথে সাথে এর মাত্রা বাড়ছে বলে জানা যায়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ১৭ টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। এসব এলাকায় গেল ২১ আগষ্ট থেকে ৭ নভেম্বর ১৮ দিনে সবচেয়ে বেশি আত্রান্ত হয়েছে পানি বাহিত রোগে। এর মধ্যে চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১১ হাজার ৯৪৭ জন। ডাইরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৩৬২ জন, আরটিআই ২৪৭জন, বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের, ৯১ জনকে সাপে কেটেছে, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে একজনের। ২৪ জন পানিতে ডুবেছে, এর মধ্যে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। চোখের সমস্যায় আক্রান্ত ৩০৫জন, ভূমি ধ্বংশে আহত তিনজন ও অন্যান্যভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ২৪ হাজার ৪৫৬জন, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। ফলে জেলায় মোট আক্রান্ত ৩৮ হাজার ৪০৮জন এবং স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের প্রাণ গেছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) কুমিল্লা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ভয়াবহ বন্যায় ডায়রিয়া, ইনফেকশন, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে কুমিল্লায়। এসব রোগে আক্রান্তরা বেশিরভাগই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যার প্রভাবে ডায়রিয়া, রেসপাইরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (আরটিআই), চর্ম, চোখের প্রদাহ, সাপে কাটাসহ মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী আসছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে বন্যা কবলিত ১৪টি উপজেলার মানুষের মাঝে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এসব উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন মনোহরগঞ্জ উপজেলার মানুষ। এ উপজেলায় এখন পর্যন্ত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৮ জন। এরপরই ভয়াবহ অবস্থা নাঙ্গলকোটে। এ উপজেলায় আট হাজার ৫০৬ জন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এছাড়া ডাইরিয়া চর্মসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সদর দক্ষিন উপজেলায় ১০৮জন, চৌদ্দগ্রামে দুই হাজার ৮১৯জন, দেবিদ্বারে ৮ জন, মুরাদনগরে ৪৭জন,
বুড়িচংয়ে ৮ হাজার ৮৪ জন, চান্দিনায় ২৬ জন, লাকসামে ৩৪২ জন, মেঘনায় ৮৬ জন, তিতাসে ৫২০ জন, বরুড়ায় ৩৮ জন, আদর্শ সদরে ১৪৬ জন, ব্রাহ্মণপাড়ায় দুই হাজার ৯৬৯জন এবং লালমাই উপজেলায় ৩৩১ জন রোগী আক্রান্ত হয়েছে।
কুমিল্লার গোমতির বাঁধ ভাঙ্গা এলাকা বুরবুড়িয়ার নানুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা ফিল সার্ভিস স্বেচ্ছাসেবী মহিলা মাঠকর্মী সংগঠন। এ সংগঠনের সেচ্ছাসেবী জোহরা আক্তার রোদেলা জানান, এ স্বাস্থ্য ক্যাম্পে প্রায় ১০০জনকে চিকিৎসাসেবা। এদের সবাই পানি বাহিত ও চর্ম রোগে আক্রান্ত ছিলো।
কুমিল্লা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, বন্যা পরবত্তী পানিবাহিত রোগ ডাইরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসাসেবা নিয়ে কাজ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিদিনই বাড়ছে এসব রোগি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ২০৮টি টিম। এছাড়া সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠান কাজ করছে।
ছবিঃ বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়ার নানুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালনা করেন বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা ফিল সার্ভিস স্বেচ্ছাসেবী মহিলা মাঠকর্মী সংগঠন।
সম্পাদক ও প্রকাশক: দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ
+৮৮০১৭১১৫৮৬৬৫১
news@themirrortoday.com